ভিড় বেড়েছে মেট্রোরেলে, বেড়েছে অপেক্ষাও

ডেস্ক রিপোর্ট

মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সবগুলো স্টেশন চালু হওয়ার পরে সাধারণ মানুষের মাঝে নেমে এসেছে স্বস্তি। সেইসঙ্গে মানুষের মধ্যে কাজ করছে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা। এরমধ্যে প্রচুর ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে স্টেশনগুলোতে। অনেকে একটি রেলে উঠতে না পেরেও অপেক্ষা করছেন পরের রেলের জন্য। আবার অনেকের অপেক্ষা, কবে চালু হচ্ছে সকাল-

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সকালে মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশনে ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীরা প্রচুর ভিড় করছেন এবং সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় সময় সংবাদের। সেখানে প্রত্যেকেই ইতিবাচক মন্তব্য করেন।

আমিরুল বিশ্বাস নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গুলিস্তানে যাওয়ার জন্য উত্তরা থেকে মেট্রোতে উঠেছি। সচিবালয় স্টেশনে নেমে তারপরে গন্তব্যে যাব। কিছুদূর হেঁটে যেতে হবে। কিন্তু তাতেও বাসের থেকে অনেক আগেই চলে যেতে পারব। এতো স্বস্তিদায়ক যাত্রা আগে কোনো পরিবহনে আমি করিনি। খুব সহজেই যানজট ছাড়া যেতে পারছি।’

রনি তালুকদার নামের এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন,
কিছুদিন আগেও সকালবেলা অফিসের গাড়িতে যেতাম। কিন্তু সেখানেও যানজট এড়ানোর উপায় ছিল না। এখন কারওয়ানবাজার স্টেশন খুলে যাওয়ায় ঝঞ্ঝাটবিহীন যাতায়াত করতে পারছি। তবে এখন তো সীমিত সময়ের জন্য চলছে। পরে পূর্ণাঙ্গ সময়ের জন্য চালু হলে অন্য গাড়ির ওপরে নির্ভর করতে হবে না।

বিলম্ব প্রসঙ্গে শেওড়পাড়া স্টেশন থেকে কয়েকজন যাত্রী বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১০ মিনিট পরপর ট্রেন আসার কথা থাকলেও আজ সেটি পাইনি। কখনও কখনও ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবুও অপেক্ষা করে মেট্রোতেই যাচ্ছি। কারণ বাসের আগেই যানজট ছাড়া পৌঁছে যাচ্ছি।’

মেট্রোরেলের ভাড়া নিয়ে বেসরকারি চাকরিজীবী শফিক আহমেদ বলেন, ‘সবকিছুই ঠিক আছে, তবে ভাড়াটা আরেকটু কম নিলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। শেওড়াপাড়া থেকে বাসে করে বাংলামোটর যেতে লাগে ১৫ টাকা। সেখানে মেট্রোতে নেয়া হয় ৩০ টাকা।’

এদিকে ভিড় থাকা সত্ত্বেও অনেকে গাদাগাদির মধ্যেই উঠে পড়ছেন। ফারুক মিয়া নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে বাসের মতো ভিড় থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। হুটহাট ব্রেক করার ঝামেলা নেই। কোনো রকম দাঁড়াতে পারলেই চলে যাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে আছি।’

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আসা তারেক কাজী নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাসের সময়টা ছিল অজানা। সকাল ৮টায় বাসে উঠলে ঠিক কয়টায় শাহবাগ নামতে পারব, সেটির কোনো নির্ধারিত সময় ছিল না। অনেক সময় দুটি ক্লাসও মিস হয়ে গেছে। এখন মেট্রোরেলে চড়ে ১০ মিনিটে শাহবাগ পৌঁছে যাই।’

ধারণা করা হয়েছিল, মেট্রোরেল হলে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার হার কমে আসবে। বাস্তবেও এমন বিষয়ে কথা বলেছেন মাইদুল হক নামের একজন। তিনি বলেন,
মিরপুর-১১ থেকে বাসে চড়ে অফিসে যাওয়া রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। তীব্র যানজট আর প্রচণ্ড ভিড়ে দমবন্ধ হয়ে আসতো। ভেবেছিলাম একটি মোটরসাইকেল কিনবো। কিন্তু মেট্রোরেলে চড়ে গাড়ি কেনার চিন্তা বাদ দিলাম। আজ প্রথম মেট্রোতে করে কারওয়ানবাজার যাচ্ছি। ভিড় থাকলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না আমার। এভাবে যেতে পারলে টাকা খরচ করে মোটরসাইকেল কেনা আমার জন্য অপচয় হবে।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, প্রত্যেকেই অপেক্ষা করছেন মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ চলাচলের জন্য। তখন অনেকেই বাস এবং প্রাইভেটকারের বদলে মেট্রোতে চলাচল করবেন।

কয়েকজন বলেন, ‘মেট্রোর জন্য কম ভাড়ার মধ্যে মিরপুরে বাসা নিয়েছি। এখনও নাকি কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে পুরোপুরি চলাচলের জন্য। আশা করি খুব শিগগিরই সেটি চালু হবে। তখন আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না।’

বর্তমানে সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশনে মেট্রোরেল চলছে। ১০ মিনিট পরপর উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সবগুলো স্টেশনে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারছেন। এরপর বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ১২ মিনিট পর্যন্ত চারটি ট্রেন মতিঝিল থেকে ছেড়ে যায়। এই চার মেট্রোরেল কেবল এমআরটি/র‌্যাপিড পাস থাকা যাত্রীরা চড়তে পারবেন। আর উত্তরা উত্তর-আগারগাঁও রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে। এখানেও সোয়া ৮টা এবং সাড়ে ৮টায় এমআরটি/র‌্যাপিড পাসধারীদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেন রয়েছে।

ভিড় বেড়েছেভিড় বেড়েছে মেট্রোরেলেমেট্রোরেলে
Comments (০)
Add Comment