পরিচয় গোপন রাখতে হত্যার পর পোড়ানো হয় সাইফুলের মুখ

ডেস্ক রিপোর্ট

৫২

- Advertisement -

নেত্রকোণায় গলা কেটে সাইফুল হত্যার পর পরিচয় গোপন রাখতে পেট্রল ঢেলে মুখে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। অপরাধ ঢাকতেই লাশের মুখ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ চাঞ্চল্যকর আরো অনেক তথ্য পেয়েছে র‍্যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. মাসুক মিয়া (২৯) ও আল-ইমরান ফয়সাল (৪৪)।

রবিবার (১৮ মার্চ) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১৪ এর একটি দল।
কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, গত ১৪ মার্চ দুপুরে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুর চরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলা কাটা লাশ দেখে স্থানীয়রা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। লাশ উদ্ধার ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

জানা যায়, নিহতের নাম সাইফুল ইসলাম। বাবা আব্দুস সামাদ, বাড়ি ঝিনাইদহ। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার সাইফুল হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মাসুক ও ফয়সাল মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই/চুরি চক্রের সদস্য। সাইফুল ৩/৪ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাঁর ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাতেন। গত ১০-১৫ দিন আগে গ্রেপ্তার মাসুক ফয়সালকে জানায় তাঁর ভাগিনার একটা মোটরসাইকেল দরকার। সেই সুবাদে মাসুক তাঁর ভাগিনার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ফয়সালকে দেয়।

কিন্তু ফয়সাল বাইক দিতে না পারায় মাসুক চাপ দিতে থাকে। পরে দুজন মিলে ফয়সালের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পিতভাবে তাঁরা গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছুরি ক্রয় করে। তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোণায় যেতে গত ১৩ মার্চ ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে ভাড়া করা হয়। বিকেল ৩টায় মাসুক সাইফুলকে নিয়ে মিরপুর ১৪ থেকে নেত্রকোণার উদ্দেশে রওনা করে। গাজীপুর থেকে উঠে ফয়সালও।

ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। ফয়সাল নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যায়। এরপর নেত্রকোণা শহরে চলে আসে এবং সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। পরবর্তীতে রাত ৩টার দিকে পাথর দিয়ে প্রথমে মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাইফুলের।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, পরবর্তীতে পরিচয় গোপন করতে গ্রেপ্তারকৃতরা ভুক্তভোগী সাইফুলের পরনের শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমন্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রল দিয়ে মুখমন্ডলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও সাইফুলের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে তাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেলটি মাসুকের ভাগ্নের কাছে রেখে দুজনেই আত্মগোপনে চলে যায়।

গ্রেপ্তার মাসুক সম্পর্কে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, রাজধানীর মিরপুর ১৪ এলাকায় বসবাস করতো মাসুক। দিনে রাজমিস্ত্রীর কাজ আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো সে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করে। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

গ্রেপ্তার ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‍্যাব গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

- Advertisement -

পছন্দের অন্যান্য খবর

- Advertisement -

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.