অনিশ্চয়তার কালস্রোত: বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের দিশা

আজাদ বাকী

১২

- Advertisement -

বর্তমানে বাংলাদেশ এক গভীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ মেয়াদি স্বৈরশাসনের অবসানের পর যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন অপরিকল্পিত, নেতৃত্বহীন এবং সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের অভাবে এক ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা, দখলদারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনখারাবির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, এবং সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে।

বিগত বছরগুলোতে পলাতক আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরাও অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল,যার ফলস্বরূপ সেই সরকারকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মাঠে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর সক্রিয়তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটি নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মাঠে-ময়দানে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার।

অপরদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রায় দুইযুগ পর স্বাধীন বাংলাদেশ মনখুলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং নতুনভাবে জনগনের কাছে যাবার এবং তাদের বক্তব্যগুলো উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছে। মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার।

নবগঠিত রাজনৈতিক দল এন সি পি’ও এগিয়ে যাচ্ছে দূর্বার গতিতে। তবে সরকার সমর্থিত দল নামে পরিচিত এন সি পি আন্দোলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করার পর যে প্রতিশ্রুতি জনগনকে দিয়েছিলো এবং যে স্বপ্ন বুনেছিল বাংলার মানুষের অন্তরে,তার খুব একটা প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না বলে অধিকাংশ মানুষের মাঝে অনেকটা হতাশা বিরাজ করছে ।গতানুগতিক রাজনৈতিক কর্মসূচি,হিংসাত্মক এবং আক্রমণাত্বক বক্তব্য শুনে শুনে বাংলার মানুষ বড্ড ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। মানুষ নতুন কিছু দেখতে চায়, এ বিষয়টি রাজনীতিবিদদের উপলব্ধি করার উপযুক্ত সময় এসেছে।

দেশ এখন এক ধরনের ‘নেতৃত্ব শূন্যতার’ জটিলতা ভোগ করছে। প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভারসাম্যহীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতি দেশকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা—সব খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়ছে; দেশের অর্থনীতির চাকা যেন থমকে আছে।

ভবিষ্যৎ রাজনীতির চিত্রও খুব আশাব্যঞ্জক নয়। যদি অচিরেই রাজনৈতিক দলগুলো একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হস্তান্তর নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বর্তমানে যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলো হিংসা, প্রতিহিংসা এবং প্রতিপক্ষকে নির্মূলের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ শঙ্কার মধ্যে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন প্রয়োজন একটি জাতীয় সংলাপ, যেখানে সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ এবং প্রশাসনের প্রতিনিধিরা একত্র হয়ে একটি সুষ্ঠু ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করবে। শুধুমাত্র দমন-পীড়ন অথবা উগ্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। দরকার একটি স্থায়ী ও কার্যকর রাজনৈতিক কাঠামো যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে পারবে।

সবশেষে বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতি যতই জটিল ও অস্থির হোক না কেন, জাতির ভবিষ্যৎ রচনা করতে হলে আমাদের এখনই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে—রাজনীতি, প্রশাসন ও নাগরিক সমাজ—সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশ পেতে পারে শান্তি, স্থিতি ও অগ্রগতির পথ। অন্যথায়, এই অনিশ্চয়তার কালস্রোত আমাদের আরও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দেবে।পথ হারাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, প্রাণের বাংলাদেশ, কালো ছায়ায় ঢেকে যাবে ১৮ কোটি বাংলাদেশির ‘প্রিয় বাংলা’র মুখখানি……

- Advertisement -

পছন্দের অন্যান্য খবর

- Advertisement -

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.