যে কারণে কোরআনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে আমেরিকান তরুণীদের

ডেস্ক রিপোর্ট

২১

- Advertisement -

গাজায় চলমান ইসরায়েলের নৃশংস হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের দৃঢ়তা ও অবিচলতা বিস্ময় তৈরি করে আমেরিকার তরুণদের মনে। এর কারণ জানতে চেয়ে তারা সন্ধান পায় মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের। সত্যের অনুসন্ধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে কোরআন শেখার পাঠচক্র। কোরআনের প্রতি মার্কিন তরুণীদের ভালোবাসার সেই গল্প তুলে ধরা হয় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে।

দৈনিক কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য এর সংক্ষিপ্ত অনুবাদ তুলে ধরা হলো-
শিকাগোতে বসবাস করেন ৩৪ বছর বয়সী মার্কিন তরুণী মেগান রাইস। বই পড়া ও বই নিয়ে লেখালেখি করা তাঁর অন্যতম প্রিয় কাজ। মেসেজ অ্যাপ ডিসকর্ড এ উপন্যাস নিয়ে নিয়মিত লিখেন। টিকটক প্ল্যাটফরমেও বুক রিভিউ লেখেন।

সর্বশেষ গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলা শুরু করেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি ফিলিস্তিনি জনগণের বিশ্বাস নিয়ে কথা বলতে চাই। তারা এত শক্তি ও দৃঢ় মনোবল কিভাবে লাভ করেছে? সব কিছু হারানোর পরও কিভাবে তারা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে? আমি এসব জানতে চাই।’ তখন অনেকে তাঁকে ইসলামের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন পড়ার কথা বলে।

এরপর রাইস কোরআন পড়তে গিয়ে এতটাই মুগ্ধ হন যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হিজাব পরা শুরু করেন। গাজায় আটকে পড়া ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে রাইস কোরআন পাঠ শুরু করেন। এখন তা তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তা ছাড়া এসব নওমুসলিম নারীর কাছে কোরআনের আরেকটি অবাক করা বিষয় হলো, নারী ও পুরুষের সমতা। কারণ কোরআনের বর্ণনা অনুসারে সৃষ্টিকর্তার কাছে নারী ও পুরুষ সমান মর্যাদার অধিকারী।

আর সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, বিগ ব্যাং ও অন্য তত্ত্বগুলো নিয়ে কোরআনের আয়াত তাঁদের বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করে।
শুধু তিনিই নন; তাঁর মতো অনেক আমেরিকান তরুণ টিকটকে হ্যাশট্যাগ কোরআন বুক ক্লাবের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম ও কোরআন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। পশ্চিমা মিডিয়ার নেতিবাচক উপস্থাপনের পরও কোরআন সম্পর্কে তাঁরা জানার চেষ্টা করছেন এবং এর মাধ্যমে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জারিনা গ্রেওয়াল। আমেরিকান সংস্কৃতিতে ইসলামী গ্রন্থ ও ধর্মীয় সহনশীলতা বিষয়ক একটি বই নিয়ে তিনি কাজ করছেন। তাঁর মতে, টিকটকে মানুষের ধর্মীয় আগ্রহের বিষয়টি মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ ৯/১১ এর পরও পবিত্র কোরআনের কপির বিক্রি অনেকে বেড়েছিল। অবশ্য তখন ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার করতে গিয়ে এমনটি হয়েছিল। তবে এখন ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অবিশ্বাস্য অবিচলতা, দৃঢ় বিশ্বাস ও নৈতিক শক্তি বোঝার জন্য সবাই কোরআনের দিকে ঝুঁকছে।

ফ্লেরিডার টাম্পা শহরের অধিবাসী ৩৫ বছর বয়সী নেফারতারি মুন। কোরআনের সঙ্গে মুনের সম্পর্ক শুধু ধর্মীয় কারণে নয়; বরং আধ্যাত্মিক কারণে। তাঁর মতে, ‘আমি দেখতে চেয়েছি, কিভাবে মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও আল্লাহকে ডাকে? পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা দেখে আমি নিজের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করি। বিষয়টি আমি যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে পারব না। তবে কোরআন পড়ে আমি অন্তরে প্রশান্তি উপলব্ধি করি। অতঃপর আমি কালেমা শাহাদাহ পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করি। মনে হয়েছে, আমি এমন কিছু ফিরে পেয়েছি, যার জন্য আমি দীর্ঘকাল ধরে প্রতীক্ষায় ছিলাম।’

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখিকা ও পডকাস্ট হোস্ট মিশা ইউসুফ। ২০২০ সাল থেকে ইনস্টাগ্রামে কোরআন বুক ক্লাব নামের একটি ধারাবাহিক আলোচনায় সংযুক্ত রয়েছেন। পবিত্র কোরআনের আধুনিক অধ্যয়নের পাঠক তিনি। তিনি বলেন, ‘কোরআনের অনেক বিষয়ে তরুণদের খোরাক রয়েছে। কোরআন প্রাকৃতিক রূপক অর্থে পরিপূর্ণ একটি গ্রন্থ। তা আপনাকে পরিবেশবাদী হতে উৎসাহিত করবে। কোরআন আমাদের সবাইকে পৃথিবীর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাই পৃথিবী বা মানুষের সঙ্গে আমাদের শোষণমূলক আচরণ করা অনুচিত।’

যুক্তরাষ্ট্রের রুটজার্স ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক চান-মালিক একজন নওমুসলিম নারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামোফোবিয়া নিয়ে তাঁর গবেষণা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘টিকটকে এখন যা ঘটছে আমারও ঠিক এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে। তখন আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। কারণ আমার সঙ্গে দেখা হওয়া মুসলিমদের চেয়ে খবরে পড়া মুসলিমরা এতটা ভিন্ন কেন? সমাজে বহুলপ্রচলিত চিন্তা ও বাস্তব সত্যের মধ্যে আমি এতটা বিচ্ছিন্নতা আগে কখনো উপলব্ধি করিনি।’

- Advertisement -

পছন্দের অন্যান্য খবর

- Advertisement -

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.